লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য


কেন কিডনি রোগী কল্যাণ সংস্থা প্রতিষ্ঠা করা হয় ?


আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে জানাচ্ছি যে, ১৮ কোটি জনসংখ্যার বাংলাদেশে ২ কোটিরও অধিক মানুষ কোনো-না-কোনোভাবে কিডনি রোগে আক্রান্ত । মরণব্যাধি কিডনি রোগের দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল । প্রতি বছর অগণিত মানুষ অর্থাভাবে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করছে । প্রিয়জনকে বাঁচাতে মৃত্যুর দিনক্ষণ পর্যন্ত চিকিৎসার পেছনে ছুটতে বাধ্য থাকে ভুক্তভোগী পরিবার । প্রবাদ আছে : “কিডনি রোগী মরেও যায়, মেরেও যায়” । বাস্তবে আমৃত্যু চিকিৎসার ভার সইবার সাধ্য ধনী, মধ্যবিত্ত বা হতদরিদ্র কারোই নেই । ফলে রোগী ও ভুক্তভোগী পরিবারের জন্য মৃত্যুই যেন মুক্তি । এমন বাস্তবতায় আমাদের অদম্য প্রত্যয় “মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি”। কিডনি রোগের দুষ্প্রাপ্য, ব্যয়বহুল চিকিৎসায় ভুক্তভোগী এবং নির্মম বাস্তবতার প্রত্যক্ষ সাক্ষী হিসেবে অর্থাভাবে চিকিৎসাবঞ্চিত হতদরিদ্র কিডনি রোগী ও ভুক্তভোগী পরিবারের বুকফাটা বোবাকান্না ও নির্মম কষ্টের আওয়াজ সরকার, সামর্থ্যবান ও মানবিক সমাজকে জাগ্রত করে সার্বজনীন সহযোগিতা ও উদ্যোগের মাধ্যমে জীবন রক্ষার প্রয়োজন বোধ থেকে প্রতিষ্ঠা করা হয়“কিডনি রোগী কল্যাণ সংস্থা”। বিশেষ করে চিকিৎসক, হাসপাতাল, ক্লিনিক, ল্যাব, ব্লাড ও অক্সিজেন ব্যবস্থাপনা, অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস, ন্যায্যমূল্যে ডায়ালাইসিস, ঔষধসহ কিডনি-রোগীদের চিকিৎসার সু-ব্যবস্থা সংস্থার মূল উদ্দেশ্য। এ লক্ষ্যে স্বাস্থ্যবিষয়ক দপ্তরসমুহ, এনজিও, মানবিক সংগঠন, ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান ও দেশ-বিদেশের সহযোগিতায় হতদরিদ্র রোগীদের বিড়ম্বনামুক্ত সাশ্রয়ী মূল্যে, বিনামূল্যে চিকিৎসার সু-ব্যবস্থার মাধ্যমে জীবনরক্ষার এক অদম্য প্রত্যয় নিয়ে প্রতিষ্ঠা করা হয়
“কিডনি রোগী কল্যাণ সংস্থা” Kidney Patient Welfare Association.

• কিডনি-বিকল একটি মরণব্যাধি ।
• দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগের দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা অসম্ভব ব্যয়বহুল, যা দুঃস্থ-অসহায় রোগীদের জন্য অলীক স্বপ্ন ।
• ফলে চিকিৎসার অভাবে অসংখ্য পরিবার হারাচ্ছে তাদের প্রিয়জনকে ।
• চিকিৎসার শেষ ধাপে ডায়ালাইসিস অথবা কিডনি-প্রতিস্থাপন বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন ।
• অর্থাভাবে ধারাবাহিক কয়েকটি ডায়ালাইসিস-গ্রহণে অসমর্থ হলে মৃত্যু অনিবার্য ।
• অপরদিকে, কিডনি-প্রতিস্থাপন ব্যয় সাধারণের নাগালের বাইরে ।
• আত্মসম্মান ও লোকলজ্জার ভয়ে তিলে তিলে নিঃশেষ হয়ে পড়ে অসংখ্য ভুক্তভোগী পরিবার ।
• অনেকে প্রতিস্থাপন-পরবর্তী অর্থাভাবে জীবনরক্ষাকারী ওষুধ সেবন করতে না-পেরে ফের মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে ।
• মানবদেহের বিস্ময়কর অঙ্গ ‘কিডনি’ সুরক্ষায় জনসচেতনতা সৃষ্টি কিডনি-রোগ প্রতিরোধের একমাত্র উপায় ।
• এছাড়াও অর্থাভাবে চিকিৎসা বঞ্চিত হতদরিদ্র রোগীদের সু-চিকিৎসা নিশ্চিত করার মানবিক দায়িত্ববোধ থেকে কিডনি রোগী কল্যাণ সংস্থা প্রতিষ্ঠার অন্যতম কারণ।

সামাজিকভাবে কিংবা সম্মিলিত প্রচেষ্টায় মানুষ যা করতে পারে, একা একা তা সম্পন্ন করা কখনো সম্ভব নয়। তাই মানব জীবনে ঐক্য একান্ত প্রয়োজন। কিডনি রোগী ও রোগীর পরিবারের সদস্যসহ সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্টির জীবনমান ও আর্থসামাজিক উন্নয়নে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে মানবসেবায় আত্মনিয়োগ করা।

এই উপলব্ধিকে সামনে রেখে মানব সেবা, সমাজের কল্যাণ, শিক্ষা, সাংস্কৃতিক, আর্থ- সামাজিক উন্নয়নে সহযোগীতা করার লক্ষ্যে “কিডনি রোগী কল্যাণ সংস্থা” Kidney Patient Welfare Association ১৪ মার্চ ২০১৯ ইং তারিখে স্থাপিত হয়।


লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য


১. কিডনি রোগী ও রোগীর বিপর্যস্ত পরিবার সহ সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠির জীবনমান ও আর্থ সামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে মানব সেবায় আত্ননিয়োগ করা ।
২. কিডনি, ক্যান্সার, লিভার সিরোসিসসহ বিভিন্ন জটিল রোগ প্রতিকারে ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টি করা।
৩. কিডনি বিকলের ফলে সৃষ্ট বহুমাত্রিক রোগের ব্যয়বহুল চিকিৎসা খরচ নির্বাহে মানবিক সমাজের দৃষ্টি আর্কষনের মাধ্যমে রোগীদের জীবন বাঁচানোর লক্ষ্য একটি সাংগঠনিক প্রয়াস ।
৪. দু:স্থ ও অসহায় রোগীদের চিকিৎসা সহায়তা করা।
৫. জটিল রোগে আক্রান্ত ভুক্তভোগী বিপর্যস্ত পরিবারের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কর্মদক্ষতা সহায়ক প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা ।
৬.জাতীয় ও ধর্মীয় দিবস সমূহ যথাযথভাবে পালন করা ।
৭. বাৎসরিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগীতা ।
৮. প্রাকৃতিক দূর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রীসহ মানবিক সহযোগিতা সম্প্রসারণ করা।
৯. গরীব ও দুস্থ রোগীদের চিকিৎসা শিবিরের মাধ্যমে বিনামূল্যে চিকিৎসার সেবা দেয়া ।
১০. কিডনি সহ যে কোন রোগীর রক্তের প্রয়োজনীয়তা মেটাতে ব্লাড ব্যাংক প্রতিষ্ঠা ও ফ্রি ব্লাড গ্রুপিং চালু করা ।
১১. সংস্থার সদস্যভুক্ত রোগী ও হতদরিদ্র রোগীর মৃত্যু পরবর্তী তার পরিবারকে এককালীন অনুদান প্রদান ।
১২. দুঃস্থ রোগী ও পরিবারের বৃদ্ধ, নারী, শিশু প্রতিবন্ধী কর্মক্ষম, শিক্ষার্থী এবং মেয়েদের বিয়েসহ জীবনমান সুরক্ষা সহায়ক প্রকল্প গ্রহন এবং কারিগরি প্রশিক্ষনের মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ভিত্তিক কর্মসূচী প্রনয়ন এবং বাস্তবায়ন ।
১৩. জরুরি চিকিৎসার ব্যয় নির্বাহের প্রয়োজনে স্বাস্থ্য বীমার প্রয়োজনীয়তা ও সুফল সম্পর্কে সর্বসাধারণকে উদ্বুদ্ধ করা এবং দেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্য স্বাস্থ্য বীমা বাধ্যতামূলক করার বিষয়ে সরকারের দৃষ্টি আর্কষন করা ।
১৪. প্রবাদ আছে “কিডনি রোগী মরেও যায় – মেরেও যায়”। অর্থাৎ অসম্ভব ব্যয়বহুল এ রোগের চিকিৎসা। এমন বাস্তবতায় ডাক্তার ভিজিট, নিরীক্ষা রিপোর্ট, ফেষ্টুলা স্থাপন, ডাইলাইসিস, কিডনি প্রতিস্থাপন ব্যয় ও ঔষধের উচ্চমূল্য, কিডনি চিকিৎসায় সর্বক্ষেত্রে ব্যয় হ্রাস ও কিডনি চিকিৎসায় সরকার ও মানবিক সমাজের সমন্বিত উদ্যোগ প্রতিষ্ঠায় পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন।
১৫. কিডনিসহ সকল জটিল রোগ প্রতিকারে জনসচেতনতা সৃষ্টি রোগ প্রতিকারক সংক্রান্ত চিকিৎসা বিজ্ঞানের তথ্যাবলী সম্প্রচারে ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ।
১৬. কিডনি চিকিৎসায় স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি কিডনি রিসার্চ সেন্টার এবং হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে, দরিদ্র-হতদরিদ্র রোগীদের সামর্থের অনুকুলে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা এবং মানসম্পন্ন চিকিৎসা সেবার লক্ষ্যে সর্বাত্নক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা
১৭. প্রতিবছর মধ্যবিত্ত, দরিদ্র-হতদরিদ্র শ্রেনীর অসংখ্য রোগী ব্যয়বহুল চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হয়ে অকালে মৃত্যুবরণ করেছে। ভূক্তভোগী রোগীদের পক্ষে সমাজ, রাষ্ট্র চিকিৎসা ব্যবস্থা ও চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্টদের স্ব-স্ব দায়িত্ববোধকে জাগিয়ে তোলার একটি সাংগঠনিক প্রয়াস।